মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:
মানিকগঞ্জে যমুনা ও পদ্মার পানি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। ফলে জেলার দৌলতপুর, হরিরামপুর ও শিবালয় উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। শুক্রবার (১৭ জুলাই) যমুনা নদীর পানি শিবালয়ের আরিচা পয়েন্টে বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার এবং হরিরামপুরে পদ্মার পানি ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মানিকগঞ্জ কার্যালয়ের পানি পরিমাপক (গেজ রিডার) ফারুক আহমেদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বন্যার পানিতে হরিরামপুর-মানিকগঞ্জ সড়কের পাটগ্রাম অংশ প্লাবিত হয়ে সড়ক ধসে যাওয়ায় মানিকগঞ্জের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
জেলা সদর, ঘিওর ও সাটুরিয়া উপজেলায় ফসলি জমিতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আউশ, আমন, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল। দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি এবং এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যমুনায় পানি ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে উপজেলার বাচামারা, চরকাটারী, বাঘুটিয়া ও জিয়নপুর ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে এসব ইউনিয়নের সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া দুই শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি।হরিরামপুর উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার লেছড়াগঞ্জ, আজিমনগর, ধূলশুড়া, হারুকান্দি, বয়ড়া, সূতালড়ি, কাঞ্চনপুর ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের সহস্রাধিক পরিবারের বসতভিটায় পানি প্রবেশ করেছে। পদ্মার ভাঙনে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মানুষজনও দিশেহারা। ভাঙন আতঙ্কে গৃহস্থলীর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে কিছু পরিবার।
দৌলতপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাবার, জ্বালানি, বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছেন বন্যাকবলিতরা। কোনও কোনও এলাকার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। গবাদিপশু নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছেন বানভাসিরা। চারদিক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম বলেন, দৌলতপুরের চার-পাঁচটি ইউনিয়নের সহস্রাধিক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে। নতুন করে বন্যার আঘাতে এসব এলাকার মানুষ চরম অসহায় জীবনযাপন করছে। ভুক্তভোগীদের সরকারি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় এ পর্যন্ত জেলার ৭৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ৭ হাজার ৩০৬ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ৬৮৮টি পরিবার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ইতিমধ্যে বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় ১৩০ মেট্রিক টন চাল এবং ১ হাজার ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২০ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশুখাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা এবং গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা মজুদ রয়েছে।
জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, জেলায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। বানভাসিদের জন্য পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, চাল ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুদ আছে।