মিরু হাসান বাপ্পী
বগুড়া প্রতিনিধি:
হাসপাতাল কিংবা ডায়াগোনস্টিক সেন্টারে নয় বগুড়ায় ডোপ টেস্টের (রক্তে ও প্রস্রাবে মাদকের উপস্থিতি আছে কি’না তার পরীক্ষা) রেজাল্ট মিলছে কম্পিউটারের দোকানে। শহরের নির্দিষ্ট কিছু দোকানে ডোপ টেস্টের ‘নেগেটিভ’ রেজাল্ট বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এজন্য সেই দোকান মালিকরা ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা নিচ্ছে।
অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তির ক্ষেত্রে এবার বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছেন। আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রথম মেধা তালিকায় সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে হবে। এজন্য ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা ডোপ টেস্টের জন্য গত ক’দিন ধরে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল, শহীদ জিয়াউর রহমান হাসপাতাল এবং বেসরকারি একাধিক ডায়াগোনস্টিক সেন্টারগুলোতে ভিড় করছেন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা ফি নেওয়া হলেও বেসরকারি ডায়াগোনস্টিক সেন্টারগুলোতে ১ হাজার ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার টাকা ফি নেওয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি ডায়াগোনস্টিক সেন্টারগুলোতে ডোপ টেস্টের ফি বেশি এবং রেজাল্ট পেতে অনেক সময় লাগে। তাছাড়া মাদক সেবন করে এমন শিক্ষার্থীরা ডোপ টেস্টের ‘পজিটিভ’ রেজাল্ট নিয়ে শঙ্কিত। এসব কারণে ভর্তিচ্ছুদের অনেকে ডোপ টেস্ট না করিয়েই নিজেদের পক্ষে জাল টেস্ট রিপোর্ট নিতে নির্দিষ্ট কিছু কম্পিউটার দোকানে ভিড় করছে।
কম্পিউটারের দোকানে তৈরি করা জাল ডোপ টেস্টের একটি রেজাল্টে দেখা গেছে তাতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোগ্রাম সম্বলিত প্যাথলজি বিভাগের প্যাড বানিয়ে নির্ধারিত ৫টি পরীক্ষার রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যথলজি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ৩ কর্মীর সীল ও স্বাক্ষর দেওয়া হয়েছে। যিনি ওই জাল টেস্ট রিপোর্ট নিয়েছেন পরিচয় গোপন রাখার স্বার্থে তিনি জানিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে টেস্ট করাতে গেলে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে হয় এবং পয়সাও বেশি লাগে। তাছাড়া রেজাল্ট পেতে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। তিনি বলেন, ‘পরিচিত একজন আমাকে জানালো কিছু কম্পিউটারের দোকানে চাহিদা মত ডোপ টেস্টের রেজাল্ট পাওয়া যাচ্ছে। তাই আমি সেখান থেকে ১৫০ টাকায় করিয়ে নিয়েছি।’
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ শাহজাহান আলী জানান, যদি কারও রেজাল্ট ভুয়া বলে প্রমাণিত হয় তাহলে ওই শিক্ষার্থীকে ভর্তির পর ডোপ টেস্ট করানো হবে। যার কাছে ভুয়া রিপোর্ট পাওয়া যাবে সেই শিক্ষার্থীর অভিভাবককেও ডাকা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি পুলিশকেও জানানোর উদ্যোগ নিয়েছি।
বগুড়ায় পুলিশের মিডিয়া বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ জানান, এসব বন্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের সহযোগিতা নেওয়া হবে।