প্রতিবেদক
বাংলাদেশ তালেবানি রাষ্ট্র নয় যে, পরীমণিদের নিগৃহীত হতে হবে। বিনোদন ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে হয়তো পরীমণিকে বোট ক্লাবে যেতে হয়েছে। তার ন্যায়বিচার পাওয়া উচিত। তার পক্ষে জনমত তৈরি হওয়ায় ন্যায়বিচার নিয়ে আশাবাদী হওয়া যায়। যদিও বর্তমানে জনমত প্রতিফলনের সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসছে।
শুক্রবার এফডিসিতে ‘বিনোদন জগতে মাদকের অপব্যবহার বাড়ার কারণ’ নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট সমাজচিন্তক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব কথা বলেন। ছায়া সংসদের আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মাদকের অপব্যবহার বাড়ার পেছনে রাষ্ট্রের নীরব ভূমিকা আছে। পরীমণিকে মাদকের মামলায় গ্রেফতার করে হেনস্তা করার কারণ তিনি প্রতিবাদী। অন্যায়ভাবে তাকে বারবার রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আদালতের এ ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়। পরীমণির মতো অপরাধে অভিযুক্তদের বারবার রিমান্ডে নেওয়া উচিত নয়। উচ্চ আদালত হস্তক্ষেপ না করলে তার জামিন হয়তো আরও বিলম্বিত হতো।
তিনি বলেন, আমাদের সমাজে নারীরা নিরাপত্তাহীন। পুরুষতান্ত্রিকতা ও অর্থের কাছে আত্মসমর্পণ একটি স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা নারীকে পণ্যে পরিণত করে। এ দেশেও তাই হচ্ছে। সমাজে সৃজনশীলতা ক্রমশ মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে। সামাজিক পরিবর্তন ছাড়া এ অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়। করোনার মতো দুর্যোগকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর লোক ধনী হচ্ছে, অন্যদিকে ব্যাপক সংখ্যক লোক দারিদ্রসীমার নিচে চলে যাচ্ছে।
সরকারের পক্ষ থেকে মিডিয়ার সংখ্যাবৃদ্ধির কথা বলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রমাণের চেষ্টা করা হলেও প্রকৃতপক্ষে মিডিয়া স্বাধীন নয় উল্লেখ করে এ সমাজচিন্তক বলেন, সরকার এবং মালিকপক্ষের স্বার্থের অনুকূলে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে গণমাধ্যমের সংবাদ পরিবেশনের প্রধান উৎস হচ্ছে অপরাধ জগতের খবর। রাজনৈতিক সংবাদ ক্রমশ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সাংবাদিকরা অনুসন্ধান করে যেসব তথ্য সংগ্রহ করেন মালিকপক্ষের স্বার্থের পরিপন্থী হলে তা আলোর মুখ দেখে না।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, আটক বা গ্রেফতারের পর কাউকে অভিযুক্ত করে রাতের রাণী বা বিভিন্ন আপত্তিকর উপাধি দেওয়া মোটেই সঠিক নয়। বিচারের আগেই রায়ের মতো স্টেটমেন্ট দিয়ে মিডিয়া ট্রায়াল করে কারও সম্মানহানি করা উচিত নয়, যা ঘটেছে চিত্রনায়িকা পরীমণির ক্ষেত্রে। অথচ বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, কারো প্রতি নিষ্ঠুর, অমানবিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড বা এরূপ কোনো আচরণ করা যাবে না।
তিনি বলেন, পরীমনির বাসায় মদ বা মাদক পাওয়ার অভিযোগ যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে কীভাবে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তা তার বাসায় গেলো। কারা এর পৃষ্ঠপোষক? কাদের কারণে পরীমণির আজ এ অবস্থা? পিয়াসার বা মৌদের উত্থানের পেছনে কোন রাতের রাজারা বেনিফিশিয়ারি? সেই প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের মুখোমুখি করা হলে প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে।
তিনি বলেন, টেলিভিশনে ভালো নাটক, বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান তৈরি করে বিদেশি ডাবিংকৃত সিরিয়াল বন্ধ করতে হবে। তা না হলে মেধাবী ও সৃজনশীল অভিনেতা-অভিনেত্রীরা এ পেশায় টিকে থাকতে পারবে না।
প্রতিযোগিতায় সরকারি বাঙলা কলেজকে পরাজিত করে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। এতে বিচারক হিসেবে ছিলেন, উন্নয়নকর্মী ড. এস এম মোর্শেদ, নিশাত সুলতানা, সাংবাদিক আব্দুল্লাহ তুহিন, ড. সাকিলা জেসমিন ও নাদিয়া শারমিন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।