মিজানুর রহমান মিলন :
বগুড়ার শাজাহানপুরে এক টাকার ধাতবমুদ্রা বা কয়েন একেবারেই অচল বা মূল্যহীন হয়ে পড়েছে, এমনকি ভিক্ষুককে দিতে চাইলেও এক টাকার কয়েন নিতে চান না। রাষ্ট্রীয়ভাবে এই কয়েন অচল না হলেও জেলার সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকও তা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে রীতিমতো দুর্ভোগে পড়েছেন এই উপজেলার মানুষ।
এ দিকে হাটবাজারে দোকানিরাও কেনাবেচায় এক টাকার কয়েন নিতে অনীহা দেখানোয় বিপাকে সাধারণ মানুষ। রিকশা, ভ্যান বা মুদি দোকানদারেরাও কেনাকাটায় এক টাকার কয়েন নিতে অনাগ্রহী। হাটবাজারসহ ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এক টাকার কয়েন দেখলেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে লেগে যায় তর্ক। কোনও পক্ষই এসব ধাতব মুদ্রা নিতে রাজি হয় না। উপজেলায় এক টাকার অচল মুদ্রা সম্পর্কে মানুষের সঙ্গে কথা হলে এমনই সব তথ্য জানা যায়।
লেনদেন বা কেনাকাটায় কাগজের নোটের পাশাপাশি বাজারে প্রচলিত যেকোনও মূল্যমানের কয়েন যে-কেউ নিতে বাধ্য। কিন্তু বগুড়ার শাজাহানপুরে এক টাকার কয়েন লেনদেন না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের কাছে পড়ে আছে হাজার হাজার টাকার কয়েন।
উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের ফুলকোট গ্রামের মোঃ বাদশা মন্ডল , মোঃ ফারুক হোসেন ,মোঃ জাহিদুর রহমান আমেরিকান,মোঃ খোকন সাকিদার সহ একাধিক মুদি ব্যবসায়ী জানান, এক টাকার কয়েন নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রয়েছেন তাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কয়েন নিতে বাধ্য হওয়া সম্পর্কে এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, অসংখ্য পণ্য রয়েছে যেগুলো বিক্রি করতে হলে খুচরা টাকার প্রয়োজন; কিন্তু জেলা বা উপজেলা শহরে এক টাকার কয়েন কেউ নিতে চান না। তবে কেন কয়েন নিতে সবার এত অনীহা এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি কেউ। এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজর নেই বলেই আজ এই অবস্থা।
ফুলকোট মোবারক মার্কেটের চা-দোকানদার বিদুৎ মন্ডল জানান, এক কাপ র-চা ও দুধ চা পাঁচ টাকায় বিক্রি হয়। তাই চা পান শেষে সিংহভাগ ক্রেতা মূল্য হিসেবে কয়েন দেন। এ সময় এক টাকার কয়েন অনেকে দিলেও তা নেওয়া হয় না। কারণ এই কয়েন উপজেলায় চলে না। এ ছাড়া পাইকারি ব্যবসায়ীরাও এক টাকার কয়েন নিতে চান না। সব ধরনের পণ্যের মহাজনরা কয়েন দেখলে অনেকটা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। অনেক সময় মহাজনকে কর্মচারীরা এক টাকার কয়েন দিলে তা ফেলে দেন।
উপজেলার প্রানকেন্দ্র মাঝিড়া বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মের্সাস মানিক স্টোর এর স্বত্বাধিকারী বিশিষ্ট সমাজ সেবক মোঃ মানিক মন্ডল বলেন ‘কয়েক বছর যাবৎ এক টাকার কয়েন শাজাহানপুরে অচল হয়ে গেছে। এখন কেউ নিতে চান না। অসংখ্য ব্যবসায়ীর কাছে বিপুল পরিমাণ কয়েন জমে আছে। কিন্তু এক টাকার কয়েনগুলো কোনও ব্যাংকও নিতে চাচ্ছে না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক আমরুল শাজাহানপুর শাখার ম্যানেজার মোছাঃ শাহনাজ পারভীন ও গ্রামীন ব্যাংক মাঝিড়া শাজাহানপুর শাখার সেকেন্ড অফিসার মোছাঃ নাছিমা খাতুন বলেন, শাজাহানপুরে এক টাকার কয়েন কেন চলে না, এর কারন তাদের জানা নেই। ‘স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলায় এক টাকার কয়েন চালুর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে তারা মনে করেন। ধাতব মুদ্রা বা কয়েন যে নিতে চাইবে না তাকে আইনের মাধ্যমে শাস্তি দিতে হবে। কারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা বাড়িতে প্রচুর পরিমাণ কয়েন পড়ে আছে অলস টাকা হিসেবে। এতে অর্থনীতির গতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন ।