মিজানুর রহমান মিলন :
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া বাজার এলাকায় পানি নিস্কাশনের আদি তিনটি সাঁকো বন্ধ করে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক উন্নয়ন কাজের প্রতিবাদে ও সাঁকো নির্মাণের দাবীতে এবং রাস্তা পারাপারের জন্য আন্ডারপাস/ফুট ওভারব্রীজ নির্মাণের দাবীতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসি।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকেলে আড়িয়া বাজার স্ট্যান্ডে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের পাশে আড়িয়া কাঁটাবাড়িয়া ও রহিমাবাদ গ্রামের সর্বস্তরের জনসাধারনের ব্যানারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক (অব:) আওরঙ্গজেব, আড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মন্টু, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ছুমির উদ্দিন, হায়দার আলী, আবু তালেব, ইউপি সদস্য আব্দুল বাছেদ, ছাইদুর রহমান, সহ এলাকার সর্বস্তরের সহস্রাধিক মানুষ অংশ গ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে আসা মানুষেরা জানান, শাজাহানপুর উপজেলার অন্যতম জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা আড়িয়া বাজার। এখানে প্রতিদিন সকাল-বিকাল বাজার বসে। আড়াইশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই বাজার কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে জনবসতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ, খেলার মাঠ, ইউআরসি ভবন, মসজিদ, পাঠাগার সহ ব্যবসায়িক ও সামাজিক নানা প্রতিষ্ঠান। এই আড়িয়া বাজার এলাকার বুক চিরে বয়ে গেছে ঢাকা-বগুড়া জাতীয় মহাসড়ক। মহাসড়কের পুর্ব পাশে আড়িয়া-রহিমাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, রহিমাবাদ সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাায়তুল মামুর জামে মসজিদ, স্কুল মার্কেট ও কাঁচা বাজার এবং পশ্চিম পাশে রহিমাবাদ সরকারি বালক প্রাথমিক বিদ্যালয়, আড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, উপজেলা রিসোর্স সেণ্টার (ইউআরসি) ভবন, ঐতিহ্যবাহী আড়িয়া বাজার খেলার মাঠ, শহীদ মনিরুজ্জামান পাঠাগার, শহীদ মাসুদ স্মৃতি স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনার। মহাসড়কের উভয় পাশে গড়ে ওঠা জনবসতি ও অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আড়িয়া বাজার থেকে ডেমাজানীগামী লিংক রোড দিয়ে সরকারি কমরউদ্দিন ইসলামিয়া কলেজ, ডেমাজানী শ.ম.র উচ্চ বিদ্যালয়, আসাতন নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সহ পূর্ব বগুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকার লোকজন যাতায়াত করেন। এছাড়া আড়িয়া-রহিমাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র এবং সরকারি কমরউদ্দিন ইসলামিয়া কলেজে এইচএসসি ও এইচএসসি (বি.এম) পরীক্ষার কেন্দ্র রয়েছে। যে পরিক্ষা কেন্দ্রে যেতে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের পরিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিক্ষার্থীদেরকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পারাপার হতে হয়। এছাড়া প্রতিদিনই কোমলমতি শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক সহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা-বগুড়া জাতীয় মহাসড়ক পারাপার হতে হচ্ছে।
আড়িয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা সহকারি অধ্যাপক (অব:) আওরঙ্গজেব জানিয়েছেন, রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে বিভিন্ন সময় সড়ক দুর্ঘটনায় অনেকের মৃত্যু হয়েছে। আবার কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তাই নিরাপদ চলাচলের জন্য জরুরি ভিত্তিতে আড়িয়া বাজার স্ট্যান্ডে আন্ডারপাস নির্মাণ করা প্রয়োজন।
আড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জানান, বিগত ২ বছর যাবত পানি নিস্কাশনের আদি তিনটি সাঁকো বন্ধ করে জাতীয় মাহাসড়ক ফোর লেনে উন্নীত করণের কাজ শুরু হয়েছে। মহাসড়ক পারাপারের জন্য কোন ওভার ব্রিজ কিংবা আন্ডারপাস নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সাঁকো নির্মাণেরও কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। পানি নিস্কাশনের জন্য সাঁকো নির্মাণ করা না হলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কাঁটাবাড়িয়া গ্রামের অনেক মানুষের মাটির ঘর ধ্বসে পড়বে। যাতায়াতের রাস্তা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ তলিয়ে যাবে। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ঢুকতে পারবে না। চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হবে। এমতাবস্থায় সড়ক কর্তৃপক্ষ সাঁকো এবং আন্ডারপাস নির্মাণের উদ্যোগ না নিলে এলাকাবাসিকে সাথে নিয়ে একের পর এক কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়া যাওয়া হবে।
এবিষয়ে সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) প্রকল্প-২’র নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন কায়ছার চপল জানান, আড়িয়া বাজার এলাকায় একটি কালভার্ট সাঁকো নির্মাণ করা হবে। আন্ডারপাস নির্মাণ করা সম্ভব না হলেও ফুট ওভারব্রীজ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।